রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও বিএডিসির মধ্যে যাতায়াত পথ নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। জেলা পরিষদ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছে, যার ফলে বিএডিসির আঞ্চলিক বীজগুদামে বড় গাড়ি প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে গুদামজাতকরণ ও বীজ বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ অসুবিধা কৃষক ও ডিলারদের জন্য বাড়াবে খরচ ও কষ্ট।

জেলা পরিষদ বলছে, নিরাপত্তার জন্যই এই দেওয়াল দেওয়া হয়েছে। এরপরও চলাচলের জন্য ৫ ফুট জায়গা রয়েছে, যেখানে ছোট যানবাহন যেতে পারে।

বিএডিসি বলছে, শুধু হাঁটার পথ যথেষ্ট নয়—বীজ পরিবহনে বড় ট্রাক দরকার, যা এখন আর প্রবেশ করতে পারছে না।

জানা গেছে, রাঙামাটির উত্তর কালিন্দীপুরে অবস্থিত এই আঞ্চলিক বীজগুদামটি ১৯৭৯-৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির ১৭টি উপজেলার কৃষক ও ডিলাররা এখান থেকেই সরকারি ও প্রণোদনার আওতায় বিভিন্ন মৌসুমের ধান, ভুট্টা, সরিষা, বাদাম ও পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহ করে থাকেন। গুদামটির ধারণক্ষমতা ২০০ মেট্রিক টন হলেও প্রতি বছর গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি বীজ বিতরণ ও সংরক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ থাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রণোদনার আওতাভুক্ত বীজ। এই গুদামে ঢোকার পথ সংকুচিত হওয়ায় এখন বড় ট্রাক দিয়ে বীজ লোড-আনলোড করা সম্ভব হচ্ছে না, যা সরাসরি কৃষকদের জন্য বীজ সরবরাহে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএডিসির রাঙামাটি আঞ্চলিক শাখার উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দীপক কুমার দাশ বলেন, ‘জেলা পরিষদ সীমানা প্রাচীর দেওয়ার পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছিল। আমি ব্যক্তিগতভাবে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছি, লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁর কিছু করার নেই। পাশ দিয়ে যাতায়াতের জন্য যে জায়গা রেখেছেন, সেটি দিয়ে কেবল মানুষ হাঁটতে পারে, বড় গাড়ি চলতে পারে না। অথচ আমাদের গুদামে ঢাকা থেকে বড় ট্রাক আসে। এখন সেগুলো ঢুকবে কীভাবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘এই গুদাম থেকেই রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ১৭টি উপজেলার কৃষক ও ডিলারদের মাঝে বীজ সরবরাহ করা হয়। যাতায়াতের অসুবিধার কারণে শুধু গুদামজাত নয়, বীজ বিতরণেও সমস্যা তৈরি হবে। এতে খরচ বাড়বে, সময় লাগবে বেশি, ফলে কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

অন্যদিকে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেন, ‘জেলা পরিষদের সীমানা রক্ষা করাটা আমার দায়িত্ব। পরিষদের নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রাচীর নির্মাণ করেছি। পাঁচ ফুট জায়গা রেখেছি যাতায়াতের জন্য, সেখানে সিএনজি অটোরিকশা চলতে পারে। এখন আপনি কিভাবে যাবেন, না যাবেন—সেটা তো ভাই আমার দেখার বিষয় না।’