মানিকছড়ির বাটনাতলী। দুপুরে আকাশ ঘোলাটে, সন্ধ্যায় বাতাসে কয়লার গন্ধ। ঢাকাইয়া শিবির, লালটিলা আর নবীনগর—এই তিন গ্রামের মানুষ এখন যেন ধোঁয়ার মধ্যে বাস করছে। আগুনে জ্বলছে টিলার কাঠ, গাছগাছালি; সেই ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে আকাশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়ির পাশে চুল্লি। কোথাও কাঠ সাজানো, কোথাও জ্বলছে আগুন। কেউ কয়লা ঘেঁটে ছাই ছাঁকছেন, কেউ বস্তায় পুরে বাজারে পাঠাচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানালেন, বাটনাতলীতে অন্তত ৮০–৮৫টি পরিবার কয়লা উৎপাদনে জড়িত। প্রতিটি পরিবারের ২–৩টি চুল্লি মিলিয়ে পুরো এলাকায় প্রায় ২০০টি চুল্লি চলছে।

প্রতি চুল্লিতে মাসে ২০০ মণ কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হয় ৯০০–১,০০০ কেজি কয়লা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩০–৩২ টাকা দরে। হিসাব বলছে, প্রতি মাসে শতাধিক চুল্লিতে ৮০০ টন কাঠ পুড়ে যাচ্ছে পাহাড়ের বুক থেকে—তার বিনিময়ে উৎপন্ন হয় মাত্র ১০০ টন কয়লা।

ঢাকাইয়া শিবিরের কৃষক আবু সাঈদ বললেন, কয়লা বানানো ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। চাষ করে সংসার চলে না। ধোঁয়ায় চোখ জ্বলে, তবু এই আগুনেই পেটের ভাত।

স্থানীয় এক শ্রমিক বলেন, দিনে ১২ ঘণ্টা চুল্লির পাশে থাকলে রাতে বুক জ্বলে, কাশি ওঠে। কিন্তু কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না।

চুল্লিগুলো অনেক সময় স্কুল, বসতবাড়ি বা বাগানের একদম পাশে। ঢাকাইয়া শিবির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাত্র ৬০–৭০ গজ দূরেই পাঁচটি চুল্লি। শিশুদের খেলার মাঠ এখন ধোঁয়ায় ঢাকা।

মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. নাঈমুল হক বলেন, কয়লা পোড়ানোর ধোঁয়ায় সূক্ষ্ম ধূলিকণা থাকে, যা শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

বন বিভাগের গাড়ীটানা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আবদুল হামিদ জানান, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সামান্য কয়লা তৈরি করা আইনসিদ্ধ, কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা উৎপাদন সম্পূর্ণ বেআইনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশের ক্ষতি কোনোভাবেই সহনীয় নয়।